Logo
শুক্রবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
নড়াইলের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অস্থিরতার নেপথ্যে কাহিনী-(২)

প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ ও সরকার নিষিদ্ধ নোট গাইড বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০২:১৭ পিএম
প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ ও সরকার নিষিদ্ধ নোট গাইড বাণিজ্য


নড়াইল সদর উপজেলার গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যেই দিন রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের আগমন ঘটেছে,সেই দিন থেকে এ বিদ্যালয়ের সর্বনাশ শুরু হয়েছে।

সারাক্ষন টাউটারি বাটপারি ও অর্থকামাইয়ের ধান্দায় ব্যস্ত থাকা প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের অর্থ লিপ্সার কারনে বিদ্যালয়টি ধ্বংস হতে চলেছে। সাধারণ শিক্ষকরা বরাবরই তার রাহুমুক্ত রেখে বিদ্যালয়টি পরিচালনার চেষ্টা করে আসছেন।

কিন্তু ক্ষমতা বলে প্রধান শিক্ষক যা খুশি তাই করে, তাদের মন ভেঙ্গে দেন। বিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়ে সাধারণ শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ধরে রাখার নিরলস চেষ্টা করেন। তাইতো বার বার এ বিদ্যালয়টি ভালো ফলাফল করে জেলার মধ্যে ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী,কোন ভাবেই প্রধান শিক্ষক রবীনকে তারা ভালো করতে পারছেন না।

অর্থের লোভ মোহ তাকে পেয়ে বসেছে। সর্বদলীয় ঐক্যজোট নেতা রবীন্দ্রনাথ মন্ডল টাকা ছাড়া আর কিছুই চেনেন না। সারাক্ষণ ধান্দায় থাকেন,কোথা থেকে কিভাবে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করা যায়। আত্নসম্মান ও মর্যাদাবোধ বলে তার কিছুই নেই। এ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামী ও তাপস পাঠককে হস্তগত করে সকল প্রকার অপকর্ম করে যাচ্ছেন।

অর্থ পিশাচ প্রধান শিক্ষক রবীন মন্ডলের কারনে বিদ্যালয়ে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করে বিদ্যালয় ও এলাকা অশান্ত করে তুলেছে। শুধুমাত্র নোট গাইড ব্যবসা করার জন্য মোটা অংকের টাকা ব্যয় করে এবং শিক্ষকদের হাতে পায়ে ধরে শিক্ষক সমিতির নেতা হন। তার ভন্ডামিতে অতিষ্ট অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষক, তারপরও পায়ে ধরে নেতা হন। তার চাটুকারিতার জন্য শিক্ষক সমিতির মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। ২০২২ সালে পাঞ্জেরী বই কোম্পানীর নোট গাইড বই সমিতির অধিনস্ত বিদ্যালয়গুলিতে চালানোর কথা বলে সাড়ে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। ওই টাকা হতে শিক্ষক সমিতিতে জমা দিয়েছেন মাত্র সাড়ে ৬ লাখ টাকা। বাকি টাকা ফিসফিসিয়ে কথা বলা রবীন চোরা একই লোপাট করেছে। ২০২১ সালে একই কোম্পানী হতে ২২ লাখ টাকা নিয়ে সমিতিতে জমা দিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। বাকী টাকা চলে গেছে শিক্ষা পরিপন্থী প্রধান শিক্ষক রবীনের পকেটে। ২০২০ সালে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে জমা দিয়েছিলেন ১৪ লাখ টাকা। এভাইে চলছে ভদ্রবেশি রবীনের টাকা কামাই কার্যক্রম। এবারও চেষ্টা করছেন নোট গাইড বাণিজ্য করার। বিভিন্ন স্থানে দেন দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। বার বার চুরির ঘটনা শিক্ষক মহল পেরিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রচারিত হওয়ায় তিনি মাথা নিচু করে নয়,মাথা উচু করেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার অধপতনের কারনে ছাত্রীদের উত্যক্তের অভিযোগ উঠে সহকারি শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামীর নামে। এমনকি এলাকার লোকজন শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামী ও অবৈধ নোট গাইড ব্যবসায়ী প্রধান শিক্ষক রবীনের বহিস্কার দাবি করেন। তাদের শাস্তির দাবি করে ঝাটা ও জুতা মিছিল হয়। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা স্কুল বিধ্বংসি প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল এবং তার দুই ক্যাডার সহকারি শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামী ও তাপস পাঠকের বহিস্কারের দাবি জানিয়েছেন। এতোকিছুর পরও নির্লজ্জ রবীনের টাকা মাথা চুলকিয়ে মিষ্টি ভাষায় দুষ্টু কাজ করা থামছে না। সচেতন এলাকাবাসি নিয়োগ বাণিজ্যের প্রায় অর্ধকোটি টাকা উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি জানান, এ বিদ্যালয়ে ৪টি পদে নিয়োগ দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও তার সহযোগিরা প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল ওই টাকার কিছু অংশ বিদ্যালয় এলাকার নিজের অনুগতদের মাঝে ভাগবাটোয়ারা করে দিয়ে সিংহভাগ টাকা নিজেই আত্নসাৎ করেছেন। এছাড়া একটা নিয়োগের পুরা টাকা তিনি একাই আলাদা ভাবে নিয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্যের এ টাকা হতে বঞ্চিত হয়েছেন স্থানীয় তার অপছন্দের একটি চক্র। তারা এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল ও তার সহযোগি এ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামী ও তাপস পাঠক এর উপর ক্ষুব্ধ হন। নিয়োগ বোর্ড সহ অন্যান্য জায়গায় কাকে কত টাকা দিতে হবে এসবই নিয়ন্ত্রণ করেন নড়াইল সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদ। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদ মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে এ নিয়োগ কার্যক্রমের সবকিছু নিজ হাতে সম্পন্ন করেন। প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত নানা ধরনের অপকর্ম থাকায় তিনি খুব সহজে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদের ফাঁদে পা দেন। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদ মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডলকে নিয়োগ বাণিজ্য করার সুযোগ করে দেন। মিডিয়া কর্মীদের দেয়ার নামে ধুরন্ধর প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল ৫লাখ টাকা সরিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে ম্যানেজিং কমিটির নিকট মিডিয়া বাবদ ৫লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে ওই টাকা আত্নসাৎ করেন। একাজ করে বহু অপকর্মের হোতা রবীন্দ্রনাথ মন্ডল মিডিয়া কর্মীদের কলংকিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে মাত্র ৩ লাখ টাকা দিয়ে নিরব রেখে নিজের মত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদের দেয়া ছক মোতাবেক নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল। আর তার এসকল কাজে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন স্থানীয় শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামী ও তাপস পাঠক। তার অপকর্মে সহযোগিতা করে শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামী ও তাপস পাঠক বেশ কিছু নগদ অর্থ কামিয়েছেন। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারী ও এলাকার লোকজনের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেই ক্ষোভের বহি:প্রকাশ হিসেবে শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামীর সামান্য তীল পরিমান অপরাধকে তাল পরিমান অপরাধ হিসেবে প্রমান করার জন্য একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। মুলত: অথর্ব অযোগ্য ঘুষখোর প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের পাপের ফল ভোগ করতে হচ্ছে তার অনুগত চামচা শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামীকে। যদিও এলাকার একটি বড় অংশের দাবি সুকান্ত গোস্বামী বরাবরই দুশ্চরিত্রের একজন মানুষ। শিক্ষক সুকান্ত গোস্বামী ও তাপস পাঠকের কারনে বিদ্যালয়ে চরম বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়েছে। আর ঘুষখোর প্রধান শিক্ষকের কারনে এতিহ্যবাহি বিদ্যালয়টি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
চাটুকার প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের অপকর্মে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি মুখ খুলতে শুরু করেছেন। আরোও চাঞ্চল্যকর তথ্য বহুল সংবাদ জানতে নিয়মিত চোখ রাখুন বিডি খবর পত্রিকায়। (চলবে)