Logo
সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩

নড়াইলে প্রভাব খাটিয়ে ভুয়া রশিদে ‘অবৈধ টোল’ আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক ,

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৩, ০৩:০৭ পিএম
নড়াইলে প্রভাব খাটিয়ে ভুয়া রশিদে ‘অবৈধ টোল’ আদায়





নড়াইল পৌরসভার নামে বাস, ট্রাক সহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিতভাবেই এ টোল আদায় করা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে আদায় হয় ১৫ হাজার টাকা। তবে একটি প্রভাবশালী মহল চুরি করে ভুয়া রশিদ ছাপিয়ে টোল আদায় করছে। অথচ পৌরসভার কর্মচারীরা নতুন বাস টার্মিনালের সামনে বৈধ টোল আদায় করতে গেলে থানা পুলিশ বাধা দিচ্ছে। এমনকি পৌর টোল আদায়ের সময় গত চার মাসে ৮ জনকে আটক ও জরিমানা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা। 

জানা গেছে, গত কয়েক মাস যাবৎ নড়াইলে প্রবেশকারী যাত্রীবাহী পরিবহনসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন থেকে ২শ’ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা-বাস-মিনিবাস-পরিবহন মালিক সমিতির কল্যাণ তহবিলের নামে ১শ’ টাকা, জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ৫০ টাকা এবং পৌর বাস টার্মিনালের নামে ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু ও কালনা সেতু চালু হওয়ায় প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ী নড়াইলের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। এ সকল পরিবহনের কাছ থেকে জোরপূর্বক টোল আদায় করা হচ্ছে।


সম্প্রতি সরেজমিন নড়াইল বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নড়াইল-ঢাকা সড়কের পাশ্বের পৌরসভার ৪ জন কর্মচারী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এ সময় মুন্সি হাসিবুর রহমান নামে এক কর্মচারী জানান, সকালে নড়াইলে প্রবেশকারী পরিবহনগুলোকে সিগনাল দিয়ে  টার্মিনালের কাউন্টারে নিয়ে পৌর টোল আদায়ের চেষ্টা করতে গেলে সদর থানা পুলিশ বাধা দেয়। কিন্তু জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের টোল আদায়কারীরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সিগনাল দিয়ে পরিবহনগুলোকে ঠেকিয়ে টোল আদায় করলেও তাদের কিছু বলছে না পুলিশ। 
এ সময় সড়কের পাশ্বে দাঁড়িয়ে থাকা জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের টাকা আদায়কারী খোকন বিশ্বাস বলেন, টার্মিনালের মধ্যে নিজস্ব কাউন্টার থেকে আমরা শুধু শ্রমিক ইউনিয়নের দুঃস্থ ও পঙ্গু সদস্যদের নামে ৫০ টাকা করে তুলছি। অন্য কোনো সমিতির নামে টোল আদায় করছি না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এই কাউন্টার থেকেই নড়াইল পৌরসভার নামে ৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে, যশোর থেকে ঢাকায় নিয়মিত চলাচলকারী সোহাগ পরিবহনের এক সুপারভাইজার দুপুরে রূপগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে নড়াইল পৌরসভা, জেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতির নামে ৩টি রশিদ দেখিয়ে বললেন, নড়াইল বাস টার্মিনালের সামনে তার বাস ঠেকিয়ে ২শ’ টাকা টোল নেয়া হয়েছে। এভাবেই তাদের প্রত্যেক গাড়িকে ২শ’ টাকা করে দিতে হচ্ছে। 
এদিকে, নড়াইল পৌরমেয়র আঞ্জুমান আরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গত বছর ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকায় টার্মিনাল বিক্রি করলেও মেয়াদ শেষের ৪ মাস পুলিশি বাধায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার টোল আদায় করতে পারেননি। এ বছর ৬ জন ঠিকাদার টার্মিনালের দরপত্র ক্রয় করলেও পুলিশি ঝামেলার ভয়ে কেউ দরপত্র জমা দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে পৌরসভার কর্মচারীরা ১ বৈশাখ থেকে নির্ধারিত ৩০ টাকা টোল আদায় করতে গেলে থানা পুলিশ বাধা দিচ্ছে। বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নকে টোল আদায়ের জন্য সিগনাল দিয়ে টার্মিনালে নিজস্ব কাউন্টারে পরিবহনগুলো আনার সুযোগ দিলেও আমাদের দিচ্ছে না। পৌরসভার পরিষ্কার—পরিচ্ছন্ন, বিদ্যুৎ বিলের সাবসিডি, কর্মচারীদের বেতনসহ বিভিন্ন আপদকালীন ব্যয় নির্বাহ করতে টোলের অর্থ খুবই জরুরি। এভাবে বাধা দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাবো এবং আইনী পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজনে পৌর কর্মচারীরা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবে। পৌরসভার নামে পৌর টোল তোলা হচ্ছে এ বিষয়ে বলেন, প্রভাবশালী একটি মহল পৌরসভার নামে ভুয়া রশিদ ছাপিয়ে চুরি করে এ টোল আদায় করছে। বিষয়টি ইতোপূর্বে থানা পুলিশকে জানিয়েছি। নবাগত জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি জানালে তিনি আইন-শৃংখলার মিটিংয়ে বিষয়টি তোলার কথা বলেছেন। এদিকে, টোল আদায়ে বাধা বিষয়টি পুলিশ সুপার মহোদয়কে কয়েকবার জানালেও তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেননি।
জানতে চাইলে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোসা. সাদিরা খাতুন বলেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো প্রকার চাঁদা বা টোল আদায় করতে দেয়া হবে না। টার্মিনালে গিয়ে টোল আদায় হোক তাতে কোন সমস্যা নেই। জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে টোল আদায়কারীরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে টোল আদায় করলেও পুলিশ তাদের কেন কিছু বলছে না-এমন প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে কারো পক্ষ নেয়ার তথ্য পাওয়া গেলে আমাদের একটু জানাবেন। এ ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।